একজন নারী গর্ভবতী হওয়ার পর তার শরীরে নানা রকমের পরিবর্তন দেখা দেয়। দেখা দিতে পারে নানা রকম রোগ বালাইও। এসবের মাঝে ডায়াবেটিস অন্যতম। গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। সেই কারণে মা ও বাচ্চা উভয়েরই নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস হলে মায়ের দরকার সঠিক চিকিৎসা ও পরিপূর্ণ যত্ন। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস গর্ভকালীন সময়ে মায়ের যে ডায়াবেটিস হয় তাকে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলা হয়। এই সময় শরীর রক্তের ব্যবহার আগের মতো করতে পারে না। ফলে এই সময়ে ব্লাড সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থার থেকে বেড়ে যায়। ১% থেকে ৩% মহিলার গর্ভকালীন সময়ে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। সন্তান হওয়ার পর সাধারণত এই ডায়াবেটিস সেরে যায়। বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয় কি ব্লাড সুগার মায়ের সঙ্গে বাচ্চারও ক্ষতি করে। যদি সময় মতো ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা না হয় তা হলে সন্তান হওয়ার সময় ও পরে অনেক সমস্যা * জন্মের সময় সন্তানের ওজন বেশি হতে পারে, জন্ডিস হতে পারে ও ব্লাড সুগার লেভেল ড্রপ করতে পারে। * অনেক সময় বাচ্চার শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাদের ঝুঁকি বেশি গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস যে কারও হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। আসুন জেনে নেই গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস হলে কাদের ঝুঁকি বেশি থাকে- * যাদের প্রথম গর্ভধারণ কালে বয়স ২৫-এর বেশি। * পরিবারে কারও ডায়াবেটিসের পূর্ব ইতিহাস থাকলে। * মায়ের অতিরিক্ত ওজন হলে। * আগে থেকে ডায়াবেটিস থাকলে। * আগে মিসক্যারেজ হলে। * মায়ের হাই ব্লাড প্রেসার থাকলে। চিকিৎসা * ব্লাড সুগার লেভেল যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করুন। এতে সন্তান হওয়ার সময় ঝুঁকি কম হবে। * নিয়মিত ব্লাড সুগার মাপুন। সম্ভব হলে দিনে ২-৩ বার। * যতটা সম্ভব পুষ্টিকর খাবার খান। অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার খাবেন না । * সাধারণ বাড়ির কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হাঁটতে, সাঁতার কাটতে কিংবা অন্য ব্যায়াম করতে পারেন। * কিছু দিন পর পর চেক-আপ করান। * চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্লাড সুগার লেভেল স্বাভাবিক রাখার জন্য ওষুধ খান। ডায়াবেটিসে খাবার * গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস হলে মায়ের খাবার-দাবারের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। * প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি খান। দুপুরে ও রাতের খাবারের সঙ্গে সালাদ খান। * চিনি জাতীয় খাবারের পরিবর্তে অল্প পরিমাণে খেজুর, ডুমুর ও কিসমিস খেতে পারেন। * মিষ্টি আলু, আলুর মতো মূলসহ সবজি খেতে পারেন। খোসাসহ ভাপিয়ে নিন, পুষ্টিগুণ বজায় থাকবে। * মাছ খেতে পারেন, তবে খাসির মাংস খাবেন না। মুরগির বুকের মাংস খেতে পারেন । * নিয়মিত লো-ফ্যাট দুধ ও দই খেতে পারেন। * গম, জোয়ার, খোসা সমেত চাল ও ভুট্টার মতো গোটা দানা শস্য ডায়েটে রাখতে পারেন। * খাবারে অল্প পরিমাণে তেল ব্যবহার করুন। সরষের তেল বা অলিভ অয়েল ও ব্যবহার করতে পারেন। * সাদা চিনি ও সাদা আটা খাবেন না। * এই সময় ব্লাড প্রেসার ওঠা-নামা করতে পারে। তাই অতিরিক্ত কাঁচা লবণ খাবেন না। প্যাকেট জাত খাবার ও রেডিমেড সুপ না খাওয়াই ভালো। * বিস্কিট, কেক, চকলেট ও আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ রাখুন। এর পরিবর্তে বেশি করে ফল খেতে পারেন। * বেশি পরিমাণে পানি পান করুন। এই সময়ের ব্যায়াম * ব্লাড সুগার লেভেল কম রাখার জন্য ব্যায়াম করা জরুরি। ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই ব্যায়ামের মাধ্যমে যতটা সম্ভব ওজন কম রাখার চেষ্টা করুন। * এক এক জনের জন্য এক এক ধরনের ব্যায়াম কাজ দেয়। চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন আপনার জন্য কোন ধরনের ব্যায়াম উপকারী। * শুরুতেই খুব বেশি সময় ব্যায়াম করবেন না। ৫-১০ মিনিট দিয়ে প্রথমে শুরু করুন। এরপর বাড়িয়ে ৩০ মিনিট পর্যন্ত করতে পারেন। তবে আপনার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করবেন। * ব্যাক পেইন বা অন্য কোনো ব্যথা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যায়াম করা বন্ধ করে দিন। * খেয়াল রাখবেন ব্যায়াম করার সময় আপনার হার্ট বিট যেন অস্বাভাবিক বেড়ে না যায় #collected |
0 Comments
638 Views
|