FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

শেষ গল্পটা

শেষ গল্পটা

*

Writer:maxwell_srz(shahrukh ahmed)

গল্পের নাম শেষ গল্প দেওয়ার কারণ এই গল্পটা লেখার পর আমি আর গল্প লিখি নি।।

আজকে আমার মনটা অনেক ভালো।স্টাডি কমপ্লিট।।অনেক দিন থেকে এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম।।বাড়ি যাওয়ার জন্য টিকিট ও কেটে রেখেছিলাম। কিন্তু একটা বিয়ের দাওয়াতে আটকে গেলাম।

আমার বান্ধবী অনন্যার প্রতিবেশী এক মেয়ের বিয়ে।।যদি ও মেয়ের বাবার ইচ্ছা গ্রামের বাড়ি বিয়েটা হোক।কিন্তু ছেলেপক্ষের ইচ্ছা বিয়েটা ঢাকাতে হবে।তাই ঢাকাতে হচ্ছে বিয়েটা।ফটোগ্রাফি করার জন্য দাওয়াত টা পেলাম আর কি।।


চিটাগং থেকে ঢাকায় যথাসময়ে আমি পৌছে গেলাম।৭ দিন পর বিয়ে।কিন্তু এরা এতো আগে থেকেই আনন্দে মেতে উঠেছে।একটা মেয়েকে ঘিরে দেখলাম অনেক ভীড়।।অনন্যা পাশেই ছিলো।।বললো এই মেয়েরই বিয়ে।দূর থেকে দেখলাম।কিছুটা চমকেও উঠলাম।।এ তো সেই মেয়ে যার সাথে সারাজীবন থাকতে চেয়েছিলাম।

মেয়েটার কপালের নীল টিপ আমাকে অতীতের কথা মনে করিয়ে দিলো।মেয়েটার সাথে যেদিন প্রথম দেখা করি সেদিন মেয়েটা নীল টিপ পরে এসেছিলো।।আমি সে কতক্ষণ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম নিজে ও জানি না।অবশ্য শেষে বলেছিলাম একদম পেত্নীর মতো লাগছে।।চোখ খুললাম, আজ ও মেয়েটার কপালে নীল টিপ কিন্তু সেটা অন্য কারোর জন্য।।কি অদ্ভুত বাস্তবতা তাই না?মেয়েটা আমাকে দেখলে ও চিনবে না।মুখে মাফলার জড়িয়ে আছি।আমি আবার দূর থেকেই মেয়েটা কে দেখলাম।অনেক ভিড়ের মাঝে মেয়েটার হাতে একটা আইসক্রিম।।

আমাদের সম্পর্ক যেদিন এক বছর হয় সেদিন একটা আইসক্রিম দুইজন মিলে খেয়েছিলাম।।কথা তো ছিলো সারাজীবন একটা আইসক্রিম দুইজন ভাগ করে খাবো।।আমার ভাগ্যে সেই নেই।।

আমার মাথা অনেক ভারী হয়ে আসছে।।চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।কিন্তু আমাকে কাদলে চলবে না।শক্ত হতে হবে আমাকে।২ দিন এর জন্য অনন্যাকে বলে চলে যায়।।তারপর আবার আসি।কি অদ্ভুত তাই না।নিজের ভালোবাসার মানুষটার বিয়েতে আমার দাওয়াত তাও আবার ফটোগ্রাফিতে।।এ যে কতটা কষ্টের ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

এবার মুখে আমার মাফলার নেই।মেয়েটার নাম স্নেহা।স্নেহা ও এবার আমাকে দেখতে পেলো।।আমি দূরে সরে গেলাম।।দূর থেকে দেখতে পেলাম হাতে আমার দেওয়া সেই ঘড়ি।স্নেহা এখনো আমাকে ভালোবাসে? না বাসলে সেই ঘড়িটা আজ পরে আছে কেন।।হতে ও পারে আমার মনের ভুল।হয়তো অন্য একটা ঘড়ি।

কিন্তু দূর থেকে সেইটার মতোই লাগছে।দুপুরে খাওয়ার সময় স্নেহা একটু পাশেই ছিলো। দেখলাম এখন ও মেয়েটা চামচ দিয়ে খাচ্ছে।অভ্যাস আর বদলানো না।বলেছিলাম বিয়ের পর তোমাকে আমি খাওয়াই দেব।কিন্তু স্বপ্ন তো স্বপ্নই থেকে গেলো।কিছুদিন পরই কেও একজন ওকে সারাজীবন খাওয়াই দেবে।এসব ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে পানি খাবারের ভিতর পড়ে গেলো। কোন রকমে শক্ত হলাম।।

বিয়ের দিন এগিয়ে আসতে লাগলো।।আর ৩ দিন পর বিয়ে।।আজকে খুব বৃষ্টি সকাল থেকেই।।ছাদে গেলাম।দেখলাম স্নেহা ভিজছে।দূরে থেকেই দেখে চলে গেলাম।।আচ্ছা যার সাথে ওর বিয়ে সে কি জ্বর হলেও ওর সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে? আমি তো ১০০ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে ও ওর সাথে ভিজবো বলেছিলাম।। আমার অনেক দূরে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে।

এইস এস সির কিছুদিন পর স্নেহা আমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে।।অনেক ভালোবাসতাম দুইজন দুইজনকে।।স্নেহা বলে ওর অন্য এক জায়গায় বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।আর সে বাড়ির অমতে বিয়ে করবে না।।অভিমান,কষ্ট সবই ছিলো।তাইতো দূরে চলে যায়।।চলে যায় চিটাগাং।। আর কখনো কথা বলি নি।।


মেয়েটাকে বলেছিলাম হারিয়ে গেলে আর খুজে পাবে না আমাকে।প্রতিটা দিন কথা বলার জন্য অস্থির হয়ে যেতাম।বারবার একটা কথায় মনে হতো যে কথা বলে কি হবে।ওর তো বিয়ে হবে অন্য কারোর সাথে।।অনার্সের মাঝের দিকে একবার ভেবেছিলাম আবার শুরু করি সম্পর্কটা।।কিন্তু কারোর মাধ্যমে খবর পায় স্নেহার ৫/৬ মাসের ভিতরেই বিয়ে হবে।।

অভিমানে আর কথা বলি নি।।যদি জানতাম ওর বিয়ে কখনোই আসতাম না।।।আরো ২ দিন কেটে গেলো।।আজ একবার স্নেহার সাথে কথা বলবো।।বিকালে ছাদে গিয়ে দেখি মেয়েটা একাই আছে।।

আমি বললাম কাল তো তোমার বিয়ে।।সে বললো হ্যা অনেক আনন্দের দিন।।আমার মতো কেউ তোমাকে ভালোবাসবে না।।যার সাথে বিয়ে সে তোমার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসবে।।দেখ ভাগ্যে যা লেখা থাকবে তাই হবে।তোমার কি কোন কমন সেন্স নাই?কাল আমার বিয়ে আর আজ এসব কথা বলছো।।তুমি ও অন্য কাওকে নিয়ে সুখী হয়ো।


কথা গুলো হজম করতে যে কি পরিমাণ কষ্ট হয়েছে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।কাদতে কাদতে চলে আসলাম।।।বিয়ের দিন চলে আসলো।শুনলাম আর ৩০ মিনিট এর ভিতর চলে আসবে।।আমার ইচ্ছা করছে স্নেহা কে অনেক দূরে হারিয়ে যায়।।বাস্তবতা মেনে নিক বা না নিক আমি ওকে নিয়ে হারিয়ে যাবো।কিন্তু ও নিজেই তো আমাকে ভুলে গেছে।।কি অদ্ভুত।।

সময়ের সাথে মানুষ গুলো ও বদলে যায়।।দূর থেকে দেখলাম গাড়ি আসছে।।আর কান্না থামাতে পারলাম না।।বৃষ্টি সকাল থেকেই।আমার সাথে বৃষ্টি ও কাদছে।।গাড়ি থেকে সবাই নামলো।।আমি অবাক হয়ে গেলাম।এ কি।। এ তো সব আমার বাড়ির মানুষ।।আর বর ই বা কই?স্নেহা কে দূর থেকে দেখলাম।একটা চোখ মারলো আমাকে।

অনন্যা এসে বললো কাহিনি শোন।।তুই তো স্নেহার থেকে অনেক দূরে ছিলি।স্নেহার বিয়ে হওয়ার কথা ঠিকই ছিলো।কিন্তু স্নেহার কান্নার কাছে ওর বাড়ির মানুষ হার মেনেছে।।কিছুতেই পারে নি ওকে বিয়ে দিতে।।এদিকে তোকেও ও খুজে পাচ্ছিলো না।।একদিন তোর অনুমতি ছাড়াই তোর সাথে একটা পিক মাইডে তে দিই।আর সেখান থেকেই স্নেহা সব কিছু জানতে পারে তুই কোথায়।।সব প্লান স্নেহারই।।।আর বর তুই নিজেই।।।।এর থেকে বড় সারপ্রাইজ কি পৃথিবীতে আছে?

স্নেহা কে বললাম তখন কষ্ট দিলে কেন?এতো বছর আমি কষ্ট পেয়েছি।তুমি অনেক দূরে থেকেছ।তার থেকে একটু শোধ নিলাম আর কি।।বিয়েটা হোক বুঝবা।।আমি বললাম কবুল বলবো না।ওর হাতের কাছেই একটা ছুরি ছিলো।আপেল কাটছিলো।ছুরিটা গলায় ধরে বললো আরেকবার বল কবুল বলবি না।।আমি হাসতে লাগলাম।।।অনেক বড় সারপ্রাইজ❤❤❤❤


সব ভালোবাসা মিথ্যা হয় না।কিছু ভালোবাসা আজ ও বেচে আছে

*




7 Comments 563 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024