FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

শেষ মুহূর্তটা

শেষ মুহূর্তটা

*

writer:maxwell_srz(shahrukh ahmed)

গল্পটা আমি ক্লাস নাইনে থাকতে লিখি।সময়টা ২০১৭।।এখন আর আগের মতো লেখালেখি করি না।।

শিশিরের ২ দিন থেকে মন খুব খারাপ।৩ বছরের রিলেশন এর ব্রেক আপ।নিজের প্রতি অবহেলার শেষ নেই।যে ছেলে বলতো আমি কোনদিন হারতে শিখি নি সেই আজ চিৎকার করে বলছে আমি হেরে গিয়েছি।আর বেচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।


এভাবে কিছুদিন কেটে যায় কিন্তু শিশিরের মন ভালো হয় না।অন্যদিকে স্নেহা ও আজ খুব কষ্টে আছে।সেও তো শিশির কে শিশিরের মতোই ভালোবাসতো।কিন্তু ভালোবাসা বিশ্বাসের উপর চলে।স্নেহা রিলেশন এর শুরু থেকেই শিশিরকে খুব একটা বিশ্বাস করতো না।আস্তে আস্তে সম্পর্ক শেষ হতে হতে অবশেষে সমাপ্ত।

ব্রেক আপের পর শিশির একবার ও ফেইসবুকে এক্টিভ থাকে নি।সে তো আজ স্নেহার ব্লক লিস্ট এ আছে।তাও একবার ফেইসবুকে আসলো।এসে স্নেহার আগের বার্তা গুলো দেখতে থাকলো আর আস্তে আস্তে কাদতে লাগলো।অনেকদিন সে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট গুলো দেখে নি।আজ দেখছিলো।দেখতে দেখতে একটা আইডি দেখলো যে আইডি টা ওদের ভার্সিটির কোন মেয়ের।প্রোফাইল পিক দেওয়া ছিলো,চেনা অথচ অচেনা এইরকম লাগছিলো।কেন জানি ও রিকুয়েষ্ট টা ডিলেট করে দিলো।

কিন্তু আবার রিকুয়েষ্ট দিয়েছে।এবার একসেপ্ট করলো।ম্যাসেজ রিকুয়েষ্ট অনেকদিন শিশির দেখে নি।আজ একবার দেখলো,,৪০০ টার বেশি ম্যাসেজ । সব ঐ মেয়েটা দিয়েছে।পরের দিন খোজ নিয়ে জানতে পারলো আইডিটা জেরিন নামের এক মেয়ের যে শিশির এর থেকে ১ বছর জুনিয়র।

কেমন একটা রহস্য জনক লাগছে শিশিরের কাছে।যে মেয়ে শিশিরকে চেনে না অথচ ৪০০+ ম্যাসেজ দিয়েছে।কিন্তু কেন?নিজেকে প্রশ্নটা অনেকবার করেছে কিন্তু কোন উত্তর পাই নি।রাতে ফেইসবুকে প্রশ্নটা জেরিনকে জিজ্ঞাসা করলো।


জেরিনঃআপনি কিছুদিন আগে ফেইসবুকে আপনার গিটার বাজানোর একটা ভিডিও পোস্ট করেছিলেন।আমি অবাক হয়েছিলাম।একটা মানুষ এতো সুন্দর করে কি করে গিটার বাজাতে পারে।

শিশিরঃএই জন্যই?

জেরিনঃআমি মিথ্যা বলি নি।তখন থেকেই আপনার ফ্যান হয়ে গিয়েছি।

শিশির আর রিপ্লে করলো না।আবার স্নেহার ম্যাসেজ গুলো দেখতে লাগলো আর কাদতে লাগলো।একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে।স্নেহার স্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায়।রাত ১২:৪৯,,আজ তো স্নেহার জন্মদিন।কষ্টে শিশির স্নেহার জন্মদিনের কথা ও ভুলে গিয়েছে।৪৯ মিনিট খুব বেশি দেরি ও না।উইশ করতে গিয়ে দেখে এখনো ব্লক লিস্ট এই আছে।

সারারাত আর ঘুম হলো না।অনেক কাদলো।শীতকালে শিশির যেমন শেষ প্রহরের অন্ধকারে একলা কাদে।এই শিশির ও অন্ধকারে একলা কাদে।কেউ যদি শেষ প্রহরে বাইরে আসে তবে শিশিরের কান্না দেখতে পায়।কিন্তু এই শিশিরের কান্না কেউই জানবে না।কি সুন্দর জীবন ছিলো আর কি হলো।

গতমাসে ওর মা মারা যায় আর এইমাসে ব্রেক আপ।ওর বাবা সারাদিন ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকে।ওর পৃথিবীটা আজ শূন্য হয়ে গেছে।আজ আর শিশির ভার্সিটিতে গেলো না।সারাদিন কি করবে ভাবছে।ফেইসবুকে গিয়ে আবার স্নেহার বার্তা গুলা দেখতে লাগলো।হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।বার্তা গুলা দেখতে দেখতে ঘুম চলে আসে।রাতে ঘুম হয় নি।কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে পড়ল।

ঘুম থেকে উঠে দেখে বিকাল ৫ টা।ইদানিং শিশির খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম শুরু করেছে।ওর মা বেচে থাকলে হয়তো সে অনিয়ম করতো না।কারণ ওর মায়ের চোখের জল ও সহ্য করতে পারতো না।বিকালে একবার ফেইসবুকে গেলো। ম্যাসেজ দেখতে লাগলো কিন্তু আজ আর স্নেহার না।জেরিন অনেকগুলা ম্যাসেজ দিয়েছিলো যেগুলা এখন পড়ছে।

বেশিরভাগই ২/৩ লাইনের ছন্দ।কয়েকটা কবিতা ও আছে।এগুলা দিয়ে জেরিন বুঝাতে চেয়েছে যে ও শিশিরের অনেক বড় ফ্যান...লগ আউট করে দিলো।সারাদিন বাসায় একাকী আর ভালো লাগে না।ওর বাবা সকালে বের হয়ে যায় রাত ১০ টাই আসে।ডিনার করেই ঘুমিয়ে পড়ে।

রাতে আরেকবার ফেইসবুকে ঢুকলো।জেরিন এর ম্যাসেজ.. আপনি আজ ভার্সিটিতে যান নি কেন?

শিশিরঃআমার ইচ্ছা হয় নি তাই যায় নি।তোমার কোন সমস্যা?

জেরিনঃআজ আপনার জন্মদিন ছিলো।সরাসরি উইশ এর সুযোগ ও দিলেন না।

শিশিরঃআমার মনেই ছিলো না যে আজ আমার জন্মদিন।প্রতিবছর মা রাত ১২ টাই উইশ করে।এবার তো আর কেউ করে নি।

জেরিনঃসরি।আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাই নি।

শিশিরঃঠিক আছে।তুমি মনে রেখেছ তাই তোমাকে ধন্যবাদ।

জেরিনঃআমার একটা অনুরোধ রাখবেন?

শিশিরঃকি?

জেরিনঃআপনি কাল গিটার বাজাবেন আর আমি শুনবো।ঠিক আছে?

শিশিরঃএটা সম্ভব না।বিদায়..

পরের দিন ও শিশির ভার্সিটিতে গেলো না।রাতের দিকে একবার ফেইসবুকে ঢুকলো।জেরিন এর ম্যাসেজ..

জেরিনঃআজ ও আসলেন না।আপনাকে খুব মিস করছিলাম।

শিশিরঃকেন?

জেরিনঃআমার জন্মদিন ছিলো।আপনার গিটার বাজানো সরাসরি দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো।

শিশিরঃযার জন্য গিটার বাজাতাম সেই নেই।ছেড়ে দিয়েছি তাই।

জেরিনঃকার জন্য গিটার বাজাতেন বলা যাবে?

শিশিরঃতোমাকে বলবো কেন?

জেরিনঃআমি আপনার অনেক বড় ভক্ত তাই।

শিশিরঃস্নেহা।

জেরিনঃআমাদের ভার্সিটির স্নেহা আপু?

শিশিরঃহুম।

জেরিনঃপরে কথা হবে।রাত অনেক হয়েছে।আপনি ঘুমান।আর কাল দয়া করে ভার্সিটিতে আসবেন।

কাল শিশির ভার্সিটিতে গেলো।কিছুক্ষণ পর জেরিনের সাথে দেখা।

জেরিনঃআপনার এই সময় একটা ভালো ফ্রেন্ড এর দরকার।যার সাথে আপনি সব কথা বলতে পারবেন।

শিশিরঃআমি একাই ভালো আছি।

জেরিনঃআমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করবেন?

শিশিরঃনা।আমার এখন কাওকে বিশ্বাস করতে খুব ভয় করে।

জেরিনঃআমাকে একবার বিশ্বাস করে দেখেন।
শিশিরঃঠিক আছে।

আজ কেন জানি শিশিরের মন একটু হালকা লাগছে।বিকালে একবার ফেইসবুকে ঢুকলো।কিছুক্ষণ স্নেহার ম্যাসেজ গুলো দেখলো।আজ আর কাদতে পারলো না।জেরিনের ম্যাসেজ আসলো

জেরিনঃআপনার কি আমি ছাড়া আর কোন ফ্রেন্ড নেই?

শিশিরঃঅনেক ফ্রেন্ড আছে।ব্রেক আপ এর পর কেন জানি সারাদিন চুপ চাপ থাকতে ইচ্ছা করে।আগে তো প্রতিদিন অনেক আড্ডা দিতাম।

জেরিনঃআপনি আবার আড্ডায় মেতে উঠুন।সব কিছু নতুন করে শুরু করুন।আর আমি খোজ নিয়ে দেখেছি স্নেহা আপুর কোন বিএফ নাই।দেখবেন একদিন ঠিক ফিরে আসবে।

শিশিরঃতাই যেন হয়।

জেরিনঃপরে কথা হবে।

রাতে আজ আর শিশির দেরি করে ঘুমালো না।৮ টার দিকে ঘুমিয়ে পড়লো।সকালে ও তাড়াতাড়ি উঠলো।একবার ফেইসবুকে গেলো।জেরিনকে শুভ সকাল বললো

জেরিনঃশুভ সকাল।

শিশিরঃকেমন আছ?

জেরিনঃভালো।আপনি ভালো থাকার চেষ্টা করুন।

শিশিরঃচেষ্টা করছি।

জেরিনঃআপনি নামাজ পড়েন?

শিশিরঃপড়তাম,ব্রেক আপের পর আর পড়া হয় নি।

জেরিনঃএখন থেকে প্রতিদিন নামাজ পড়বেন।আপনার নাম্বার টা দেন।

শিশিরঃকেন?

জেরিনঃআপনাকে প্রতিদিন ভোরে ডেকে দেব।

শিশিরঃএলার্ম দিয়ে রাখবো।

জেরিনঃতাও দেন।অনেক সময় পড়তে ইচ্ছা নাও হতে পারে।তখন আমি আপনাকে যে করেই হোক পড়তে বাধ্য করবো।

তারপর শিশির তার নাম্বার দিলো।
জেরিনঃধন্যবাদ।আর সকালে হাটার অভ্যাস করুন।মন ভালো থাকবে।

শিশিরঃধন্যবাদ

জেরিনঃআমাকে সরি আর ধন্যবাদ বলবেন না।আমি তো আপনার ফ্রেন্ড।

শিশিরঃঠিক আছে।

জেরিনঃব্রেকফাস্ট করবেন দয়াকরে।

শিশিরঃঠিক আছে।

কিছুদিন পর আবার শিশির আগের মতো আড্ডা দেওয়া শুরু করলো।জেরিন যেভাবে শাসন করে সে জন্য এখন ও নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করে।পরের বছর শিশিরের জন্মদিনে

রাত ১২ টার সময় জেরিন উইশ করলো।

শিশিরঃধন্যবাদ

জেরিনঃআপনার সাথে আর কথা বলবো না।

শিশিরঃকেন?

জেরিনঃধন্যবাদ বলতে নিষেধ করেছি।

শিশিরঃআর বলবো না।

জেরিনঃকাল আমার সাথে ঘুরতে যাবেন?

শিশিরঃঠিক আছে।

জেরিনঃগিটার বাজাবেন?

শিশিরঃঅবশ্যই।

পরের দিন জেরিনের সাথে শিশির বার্থডে সেলিব্রেট করলো।অনেকক্ষণ গিটার বাজাচ্ছিলো আর জেরিন ওর দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো।
পরের দিন জেরিনের জন্মদিনে রাত ১২ টার সময় শিশির জেরিন কে উইশ করলো।

জেরিনঃআবার আপনার গিটার বাজানো শুনবো।
শিশিরঃঠিক আছে।

এখন শিশির জেরিনকে সব কথা বলে।আগে ও ফ্রেন্ড ছিলো কিন্তু এখন বেস্ট ফ্রেন্ড। কয়দিন জেরিন ফেইসবুকে গেলো না।ভার্সিটি ও বন্ধ।এই কয়টা দিনই মনে হয় ওর জীবনের সব থেকে খারাপ সময়।কিন্তু কেন?নিজেকে প্রশ্ন করে একটা উত্তরই পেলো।জেরিনকে ভালোবেসে ফেলেছে।ভাবলো জেরিন কে বলবে।

জেরিন আবার এফবি তে আসলো।

শিশিরঃএতোদিন কোথায় ছিলে?ফোন ও অফ।

জেরিনঃহাসপাতালে ভর্তি ছিলাম।টিউমার হয়েছিলো।

শিশিরঃএখন ঠিক আছ?

জেরিনঃহ্যা।

শিশিরঃকিছুদিন পর একটা কথা বলবো।

জেরিনঃএখনই বলুন।

শিশিরঃএকটু অপেক্ষা করো।

জেরিনঃঠিক আছে।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি তে শিশির জেরিন কে প্রপোজ করতে চাই।কিন্তু ঐদিন স্নেহা আবার ফিরে আসে।ওদের দেখা ও হয়।তারপর সরাসরি কথা

স্নেহাঃতুমি তো বলেছিলে আমি যত বড় ভুলই করি আমাকে ক্ষমা করে দেবে।আমি একটা দিন ও ভালো থাকিনি।প্রতি রাতে চোখের জল ফেলেছি।আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?আমি আবার তোমার সাথে হাটতে চাই।

শিশিরঃআমাকে ২ দিন সময় দাও।তারপর উত্তর পাবে।

স্নেহাঃঠিক আছে।

২ দিন ভেবে শিশির বুঝতে পারলো যে সে জেরিন কেই ভালোবেসে ফেলেছে।আর জেরিন কে পেলে অনেক সুখে থাকবে।১৬ তারিখ শিশির জেরিন এর কাছে ফোন দিলো।কিন্তু জেরিন ফোন ধরলো না।অনেক খোজ করে জানতে পারলো জেরিন হাসপাতালে । হাসপাতালে গেলো।জানতে পারলো জেরিন এর ক্যান্সার।অবস্থা খুব খারাপ।বাচার সম্ভাবনা একদম নেই।শিশির জেরিন এর কাছে গেলো

শিশিরঃএকটা কথা বলার ছিলো।

জেরিনঃবলেন।

শিশিরঃতার আগে বলো তোমার ক্যান্সার আর তুমি সেদিন বললে কেন যে টিউমার ঠিক হয়ে গিয়েছে।

জেরিনঃ২ মাস ধরে ক্যান্সার।আপনি এমনিতে অনেক কষ্ট পেয়েছেন।আমি চাই নি আপনি কষ্ট পান।

শিশিরঃআমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।(কাদতে কাদতে)

জেরিনঃআমি ও আপনাকে ভালোবাসি।আপনি স্নেহা আপুর সাথে সারাজীবন থাকবেন।আমাকে আপু বলেছে আপনাকে অনেক সুখে রাখবে।আর আপু এখন ও আপনাকে আগের মতোই ভালোবাসে।

শিশিরঃআমার যে কাওকে লাগবে না।তুমি না থাকলে রোজ সকালে কে আমার ঘুম ভাঙাবে,কে আমাকে নতুন করে হাসতে শেখাবে।কে আমার গিটার বাজানো শোনার অপেক্ষা করবে।কে আমাকে শাসন করবে??(খুব জোরে কাদতে কাদতে)

জেরিনঃস্নেহা আপু। আপুর সাথে নতুন করে জীবন শুরু করুন।আর সারাজীবন নামাজ পড়বেন।আমি তো আর থাকবো না তাই আমার জন্য দোয়া করবেন।আর আমি আপনার মনে কখনো কষ্ট দিলে ক্ষমা করে দেবেন।আমার হাত টা একবার ধরবেন?

শিশির জেরিনের হাতটা ধরলো।আস্তে আস্তে জেরিনের সময় শেষ হয়ে গেলো।জেরিন আর নেই।আজ স্নেহা আছে কিন্তু শিশিরের মনে যে আজ শুধুই জেরিন।

*




9 Comments 558 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024