FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

\'লা-কুম দ্বীন-কুম ওয়াল-ইয়া দ্বীন\'

\'লা-কুম দ্বীন-কুম ওয়াল-ইয়া দ্বীন\'

*

সৌদি আরব যেদিন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, সেদিন বঙ্গবন্ধুর জানাযা পড়া হচ্ছিল টুঙ্গিপাড়ায়। ১৬ আগস্ট ১৯৭৫।
৭১' এ আমরা স্বাধীন হলেও স্বীকৃতি দিতে ওরা অপেক্ষা করেছিল বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পর্যন্ত।।
.
থাক সেসব কথা। যেটা বলতে চাচ্ছিলাম তা হলো, ৭১-৭৫ এই দীর্ঘ সময়টুকু সৌদির কাছে বাংলাদেশ নামক কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব না থাকায় বাংলাদেশী মুসলিমরা হজ্জ্ব করতে যেতে পারছিলেন না।
বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ৭৩ এর দিকে ইন্দিরা গান্ধী একটি অর্ডিনেন্স পাশ করেন; যেখানে বলা হয় বাংলাদেশীরা ভারত থেকে হজ্জ্ব করতে পারবে।
এদেশের কিছু মুসলিম এভাবে হজ্জ্ব পালন করেছেন বলে জানা যায়। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদর্শন ছাড়াও অন্যান্য জটিলতায় এই ব্যবস্থা টেকসই হয়নি।
.
বঙ্গবন্ধু সরকার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অনেক কুটনৈতিক আলোচনা করেও সৌদি সরকারের নাগাল পাওয়া যাচ্ছিলো না।
এমতাবস্থায় ৭৩ এর ৫ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে চতুর্থ ন্যাম সম্মেলনে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু। বৈঠক চলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সৌদির বাদশাহ ফয়সালের সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
বাদশা ফয়সাল এলেন। দুই নেতা পাশাপাশি সোফায় বসলেন। বাদশা ফয়সালের দোভাষী বসলেন মাঝখানে। পারস্পরিক স্বাস্থ্য ও কুশল বিনিময়ের পর কথপোকথন শুরু হলো।
.
কথোপকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরলাম;
বাদশা ফয়সালঃ আমি শুনেছি যে, বাংলাদেশ আমাদের কাছে কিছু সাহায্য আশা করছে । আপনি আসলে কি ধরনের সাহায্য চাচ্ছেন? আর হ্যাঁ, যেকোনো ধরনের সাহায্য দেওয়ার আগে আমাদের কিছু পূর্বশর্ত আছে।
শেখ মুজিবঃ ইউর এক্সেলেন্সী! আশাকরি আমার দুর্বিনীত ব্যবহার ক্ষমা করবেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আমার মনে হয় না বাংলাদেশ ভিক্ষার জন্য আপনার কাছে হাত বাড়িয়েছে।
বাদশা ফয়সালঃ তাহলে আপনি সৌদি আরবের কাছে কি আশা করছেন?
শেখ মুজিবঃ বাংলাদেশের পরহেজগার মুসলমানরা পবিত্র কাবায় গিয়ে ইবাদত পালনের অধিকার দাবী করছে। যদি ইবাদত পালনের জন্য আপনার কোনো পূর্বশর্ত থেকে থাকে তাহলে আপনি তা বলতে পারেন। আপনি পবিত্র কাবা শরীফের তত্ববধায়ক। বাঙালী মুসলানদের কাছে আপনার স্থান অনেক উঁচুতে। একথা নিশ্চয় স্বীকার করবেন, সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদেরই সেখানে ইবাদত করার অধিকার রয়েছে। সেখানে ইবাদত পালন করার কোনো প্রকার শর্ত আরোপ করা কী ন্যায়সঙ্গত? আমরা সমঅধিকারের ভিত্তিতে আপনার সাথে ভ্রাতৃত্বপূর্ন সম্পর্ক চাই।
বাদশা ফয়সালঃ কিন্তু এটা তো কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হলো না। দয়া করে আমাকে বলুন, আপনি সৌদি আরবের কাছে আসলেই কি আশা করছেন?
শেখ মুজিবঃ ইউর এক্সেলেন্সী! আপনি জানেন যে, ইন্দোনেশিয়ার পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আমি জানতে চাই, কেন সৌদী আরব স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে আজ পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি?
বাদশা ফয়সালঃ আমি অসীম ক্ষমতাবান আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে জবাবদিহিতা করি না। তবু আপনাকে বলছি, সৌদি আরবের স্বীকৃতি পেতে হলে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে Islamic Republic of Bangladesh করতে হবে।
শেখ মুজিবঃ এই শর্ত বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে না। বাংলাদেশের জনগনের অধিকাংশ মুসলিম হলেও আমার প্রায় এক কোটি অমুসলিমও রয়েছে। সবাই একসাথে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে, একই ভাবে কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছে ।
আর সর্বশক্তিমান আল্লাহ শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্যই নন। তিনি বিশ্বভ্রমান্ডের স্রষ্টা।
ইউর এক্সেলেন্সী, ক্ষমা করবেন। তাছাড়া আপনার দেশের নামও তো Islamic Republic of Saudi Arabia নয়। বাদশা ইবনে সৌদের নামে নাম রাখা হয়েছে Kingdom of Saudi Arabia । আমরা তো কেউই এই নামে আপত্তি করিনি!
.
এ সময় অনাকাঙ্খিতভাবে শেষ হয় আলোচনা। উঠে পড়েন বাদশা ফয়সাল। দু'নেতা বেরিয়ে যেতে থাকেন।
যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেন সেই আয়াত, 'লা-কুম দ্বীন-কুম ওয়াল-ইয়া দ্বীন' ।।
.
সেই কালো ফ্রেমের চশমা পড়া হিমালয় কে চিনে নিও প্রজন্ম। তোমাকে আওয়ামীলীগ করতে হবে না। দল করতে হবে না। তোমাকে 'একাত্তর' করতে হবে। তোমাকে 'শেখ মুজিবে' এসে থামতে হবে।
কারণ
শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ।
.
[তথ্যসূত্রঃ মুজিবের রক্ত লাল, এমআর আখতার মুকুল; Who Killed Mujib, এ এল খতিব; টাইমস বিডি]

*




1 Comments 687 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024