FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

বালিশ!!

বালিশ!!

*

পিতৃহারা সিলভিয়া নিজ বাড়ি থেকে শত বছরের পুরোনো বালিশটা শ্বশুরবাড়ি নিয়ে এসেছে। মাতৃসূত্রে এই বালিশটা তার মাও পেয়েছিলো। পূর্ব যুগ থেকে মেয়ের বিয়ের সময় সিলভিয়ার বংশের মায়েরা এই বালিশ তাদের মেয়ের সাথে দিয়ে দেয়। এরপর থেকে মেয়ের জামাইয়ের জন্য সেই বালিশে ঘুমানো আবশ্যক।

বিয়েতে সিলভিয়া রাজি ছিলো না। সিলভিয়ার ধারনা ওদের পরিবারের উপর কোন অভিশাপ আছে। খুব কম বিবাহিত পুরুষই বিয়ের পর জীবিত ছিলো। সিলভিয়ার বাবা ব্যতীত প্রায় সবাই ঘুমের ঘোরে শ্বাসকষ্টে মারা গিয়েছিল। অথচ কারোরই শ্বাসকষ্ট ছিলো না।

তাই সিলভিয়ার প্রেম-ভালোবাসার প্রতি আগ্রহ ছিলো না। পছন্দ হওয়া সত্ত্বেও অনেকের প্রোপাজাল ফিরিয়ে দিয়েছে। কী লাভ! ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করে চিরজীবনের জন্য তাকে হারিয়ে ফেলার। তবে সাকিব ছিলো সবার থেকে একদম ভিন্ন। বিজ্ঞানমনস্ক সাকিব অভিশাপ বলতে কিছু আছে মানতে নারাজ।

প্রথমে ওরা ভালো বন্ধু ছিলো। ধীরে ধীরে সাকিব সিলভিয়াকে ভালোবাসে ফেলে। সিলভিয়া ওর প্রোপোজ ফিরিয়ে দিয়েছিল। সিলভিয়া বলেছিল, "প্রেম-ভালোবাসা- বিয়ে এসব তার জীবনে নেই।"
সাকিব আর সিলভিয়ায়কে জোর করেনি। শুধু বলেছিল, "বিয়ে যদি কোনদিন তোমার করতে হয় তাহলে আমাকেই বিয়ে করো। ততোদিন পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করব।"

সিলভিয়ার মা তখন মৃত্যশয্যায়। পিতৃহারা মেয়েটার জন্য ভীষণ দুশচিন্তিত, কার হাতে মেয়েটার হাত তুলে দিবেন। কে তার পর সিলভিয়াকে দেখে রাখবে। প্রায় প্রতিদিন তিনি সিলভিয়াকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। কিন্তু সিলভিয়া বারবার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়।

একদিন সন্ধ্যায় সাকিব সিলভিয়ার মাকে হসপিটালে দেখতে যায়। প্রথম দেখায় সাকিবকে ভালো লাগে তার। ছেলে হিসেবে শিক্ষিত-ভদ্র-দায়িত্ববান। এক দু কথায় তিনি জিজ্ঞেস করে বসেন, "সিলভিয়াকে পছন্দ হয় কিনা তোমার?" লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া সাকিবের গাল দুটো দেখে তিনি মা হিসেবে তিনি সবই বুঝে ফেলেন। কিন্তু দুঃশ্চিন্তা তার মেয়েকে নিয়ে, সিলভিয়া কিছুতেই বিয়ে বসতে রাজী নয়।

সেদিন রাতে সিলভিয়ার মার অবস্থার অবনতি হয়। আইসিইউতে নেওয়া হয় তাকে। ডাক্তাররা সিলভিয়াকে বলে তার মার অবস্থা আশংকাজনক। এ সময় তার মানসিক সাপোর্ট খুব বেশি দরকার। অবশেষে বাধ্য হয়ে সিলভিয়া তার মাকে বিয়ের ব্যাপারে সম্মতি জানা যায়।

.
যৌতুক ছাড়া বিয়ের পক্ষে সাকিব। মেয়ে বাড়ি থেকে শুধু একটা পুরান বালিশ দিয়েছে বলে অনেকে হাসি-কৌতুক করলেও কিন্তু বালিশটা যৌতুক তাকে দেওয়া হয় নি। কারন তার মেয়ে হলে সেই মেয়ের বিয়ের সময় এই বালিশ দিয়ে দিতে হবে। এটাই সিলভিয়াদের বংশের রীতি। এ নিয়ে তার নিজের কৌতুহলও কম নয়। এত কিছু থাকতে শুধু এই বালিশটাই কেন যুগ যুগ ধরে মেয়ের জামাইকে দিয়ে আসছে এই পরিবার!

প্রথমে এই বালিশে ঘুমাতে চায় নি সাকিব। কিন্তু নিয়ম থাকায় সিলভিয়াকে খুশি করতে বালিশের ওপর মাথা রাখে সে। নরম মোলায়েম বালিশে মাথা রেখে ভালোই লাগে তার। ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় ঘুমের জগতে। এরপর থেকে প্রতিদিন রাতে বালিশটা তার সঙ্গী। ঘুমানোর সময় এই বালিশটা না থাকলেই নয়। যতো টেনশনই থাকুক না কেন। বালিশে মাথা রাখলে ঘুম আসতে দেরি হয় না, আর এই বালিশ ছাড়া অন্য কোন বালিশে ঘুমও আসে না তার।

.
বছর খানেক পর।
সিলভিয়া নিজ মেয়ে সামিয়াকে নিয়ে এক আত্নীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছে। সাকিব যায় নি। অফিসে জরুরী মিটিং থাকায় যেতে পারে নি। রাতে বাসায় ফিরতে দেরি হয় তার। একটা অপরাধবোধ তার মনের ভিতর খচখচ করছে।

মিথি। সাকিবের পার্সোনাল সেক্রেটারী। মেয়েটার নিজের প্রতি মানুষকে আকর্ষণ করার আলাদা এক গুণ আছে। অফিসের সবাই মেয়েটাকে পছন্দ করে। কিন্তু মেয়েটা পছন্দ করে সাকিবকে। সাকিব বিবাহিত হওয়ার পরও কেন তার প্রতি মিথির এত আকর্ষণ বুঝতে পারে না সে। সবসময় মিথি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলে সে। কিন্তু কয়দিন আর। সাকিবের নিজেরও কিছুটা দূর্বলতা আছে। হোক না সে সৎ, বিবাহিত। তারপরও তো একজন পুরুষ মানুষ। সাকিবের নিজকে কন্টোল না করতে পারার ক্ষোভ বাড়তে লাগল, কিভাবে যে আজ রাতে দূর্ঘটনাটা ঘটে গেল!

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল সে। নরম মোলােয়েম বালিশে মাথা রাখতেই ঘুম চলে এলো। মধ্যরাতে বালিশটা ধীরে ধীরে সাকিবের মাথা থেকে সরে যেতে লাগল। সাকিবের মুখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বালিশটা। শক্ত করে সাকিবের মুখে চেপে বসলো। শ্বাস নিতে পারছে না সাকিব। নিজ সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেও বালিশটাকে মুখের ওপর থেকে সরাতে পারল না সে। অবশেষে কিছুক্ষণ পর দম বন্ধ হয়ে মারা গেল।

বালিশটা আবার সাকিবের মাথার নিচে চলে এলো। এটাই তো কাজ তার। এই বংশের মেয়ের জামাইদের ঘুম পাড়ানো আর তাদের অপরাধে শাস্তি প্রদান করা। যুগ যুগ ধরে এটাই তো করে আসছে সে!


🙈🙈🙈


(Collected)

*




1 Comments 136 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024